বুক রিভিউ
বই: ২৫শে মার্চ
লেখক: রবিন জামান খান
প্রকাশণী: বাতিঘর
২৫শে মার্চ নাম দেখে আবার মনে করবেন না এটা ইতিহাসের বই। ইতিহাস এ বইয়ে আছে ঠিকই কিন্তু তা আছে অন্যভাবে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালরাতকে পটভূমিতে রেখে লেখা দূর্দান্ত এক থ্রিলার এটি।
বইটাতে দুটো কাহিনী সমান্তরালে এগিয়েছে। একদিকে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফিরে অরণী নামের মেয়েটি জড়িয়ে যায় এক অদ্ভুত রহস্যে সাথে, সময়কালটা বর্তমান। অপর দিকে একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তার দুই ছাত্রকে নিয়ে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে খুঁজতে থাকে তারই বন্ধুর রেখে যাওয়া রহস্যময় একটা পার্সেল। ভিন্ন সময়কালে ঘটতে থাকা এই ঘটনা দুটো আসলে একই সূত্রে গাঁথা, যার শুরুটা আবার হয়েছে কিনা অতীতের আরো এক অবিস্মরণীয় ঘটনার মাধ্যমে, বৃটিশ বিরোধী সসস্ত্র আন্দোলন সিপাহী বিদ্রোহে।
অরণী, পাঁচ বছর আগে মায়ের উপর রাগ করে আমেরিকা চলে গিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই মা’র খুন হয়ে যাবার খবর পেয়ে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু ফিরেই বুঝতে পারে সমস্যা আছে কোথাও। খুনী হিসেবে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই রিওন (ভালো নামটা মনে নেই) তার মায়েরই প্রাক্তন ছাত্র। অরণী বুঝল, কিন্তু মেনে নিতে পারলনা। এদিকে অরনীর মা ওর জন্য অদ্ভুত কিছু জিনিস রেখে গিয়েছেন, ধাতুর একটা মুদ্রা, একটা ভাঙ্গা ঘোড়ার ছবি আর পুরোনো একটা ডায়েরী। সব কিছু বড় গোলমেলে লাগল ওর কাছে। অবশেষে অনেকটা বাধ্য হয়েই রিওনের কথা মেনে নিলো অরণী, পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করল রিওনকে। শুরু হয়ে গেলো ইঁদুর দৌড়। অরণীর মায়ের রেখে যাওয়া সূত্র ধরে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তাই করলো ওরা দুজন। টের পেলো, ওদের সামনে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে প্রাচীন এক মিথের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অবিশ্বাস্য সত্য। কিন্তু পিছু ছাড়ল না বিপদ, পায়ে পায়ে এগিয়ে আসতে থাকলো আরো। এতো সবকিছুর মাঝেও আড়াল থেকে ওদের সাহায্য করছে কেউ, বিপদ থেকে উদ্ধার করে আনছে বার বার। কে সেই লোক? কি তার উদ্দেশ্য? অরণী আর রিওন কি পারবে প্রাচীন রহস্যের সমাধান করতে? নাকি সত্যটা নাগালের বাইরেই থেকে যাবে? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে ‘২৫ শে মার্চ’।
প্রথমেই বলবো ভালো লাগার কথা। আমি সত্যিই মুগ্ধ। বাংলাদেশে মৌলিক কাল্ট থ্রিলারের ক্ষেত্রে ‘২৫ শে মার্চ’ নি:সন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সবচেয়ে ভালো যে ব্যাপার, সেটা হলো থ্রিলারের থ্রিলটা এই বইয়ে ভালো মতোই পাওয়া যায়। একেবারে ঝরঝরে ভাষায় লেখা, কোনো বাড়তি সময় নষ্ট নেই, পড়তে বসলে এঘেয়েমি আসা একেবারেই অসম্ভব। এ ধরনের ইতিহাস বেজড থ্রিলার গুলোতে যেমন দেখা যায়, পাতার পর পাতা ইতিহাস বলে যাওয়া হয়, একটা সময় গিয়ে থ্রিলার পরিণত হয় ইতিহাসের গাইডবুক হিসেবে, সে দোষ থেকেও পুরোপুরি মুক্ত ‘২৫ শে মার্চ’। দারুণ দক্ষতার সাথেই রবিন জামান খান ঐতিহাসিক তথ্য পরিবেশন করেছেন একেবারে ডায়েট মিল হিসেবে, যতটুকু দিলে থ্রিলারের স্বাদ নষ্ট না হয় ঠিক ততটুকুই। তবে আমার কাছে অরণী-রিয়নের বর্তমান সময়ের গল্পের চেয়ে ‘৭১ সালের ২৫ শে মার্চে মনিরুজ্জামান-আবু-কবিরের যে গল্প বলা হয়েছে সেটা ভালো লেগেছে বেশী। পাক হানাদারদের নৃসংসতার পাশাপাশি শিক্ষক আর দুই ছাত্রের বিশেষ এক সত্যের রুদ্ধশ্বাস অনুসন্ধান, আর্মির হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে বেড়ানো যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা সত্যিই একেবারে নার্ভ কিলিং। এবং সবশেষে দুটো সমান্তরাল কাহিনী যেভাবে একবিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে সেটাও প্রসংসনীয়।
এবার আসি খারাপ লাগার বিষয়ে। সবচেয়ে চোখে লাগে যেটা, চরিত্র গুলোর কোনো গভীরতা নেই। হয়তো কাহিনীটাকে ফাস্ট পেসড রাখতে গিয়ে চরিত্র গঠনের পিছনে লেখক সময় দেননি, তবে সেটার দরকার ছিলো বলেই আমার মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে মনিরুজ্জামান যেভাবে একের পর এক দেয়াল টপকিয়েছেন, পাইপ বেয়ে তর তর করে উপরে উঠেছেন সেটা কল্পনা করে নেয়াটা কিছুটা কষ্টকর তো বটেই। গল্পে একাধিক টুইস্ট থাকলেও, যে কোনো সচেতন পাঠকের পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেই টুইস্টগুলো ধরে ফেলা সম্ভব। এক্ষেত্রে লেখক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে ভালোভাবেই ব্যর্থ। ফিনিশিংটা যদিও বেশ ভালো, তবে আরো খানিকটা জমজমাট হলে ভালো লাগতো আরো খানিকটা বেশী। একটু যেনো তাড়াহুড়া করেই শেষ করা বলে মনে হয়েছে।
সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়। এই বইটার অনেক রিভিউয়ে পড়েছি, বইটা নাকি ড্যান ব্রাউনের দ্য ডা ভিঞ্চি কোড থেকে নকল করা। এরকম ভিত্তিহীন ধারনার উদ্ভব হলো কিভাবে, বইটা পড়ে শেষ করার পর এখন আমার জানতে মুঞ্চায়। যারা এরকম বলেছেন, হয় তারা দ্য ভিঞ্চি কোড পড়েননি, নাহয় ২৫ শে মার্চ পড়েননি। সত্যি কথা বলতে কি, বইটা পড়ার পুরোটা সময় আমি অপেক্ষে করে গেছি যে এই বুঝি নকল করা অংশটুকু হাজির হবে এবং আমি সেটা ধরতে পেরে একটা দাঁত ক্যালোনো হাসি দিবো। কিন্তু রবিন জামান ভাই আমাকে হতাশ করেছেন (😛) এরকম মনোভাব নিয়ে পড়ার কারণে আমি পাঠক হিসেবে লজ্জিত এবং লেখকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এটা যে সম্পূর্ণ মোলিক উপন্যাস সে বিষয়ে আমার মনে কোনোই সন্দেহ নেই। তবে হ্যাঁ, খুব মোটা দাগের ফ্রেমে ফেলে যদি চিন্তা করা হয়, ভিঞ্চি কোডের অল্প কিছু অংশের সাথে হালকা একটা মিল পাওয়া যায় বটে, কিন্তু লেখক সেটা সচেতন ভাবে করেছেন বলে মনে হয়না এবং সেঈ মিলটুকু যদি বিবেচনায় নেই তাহলে বলতে হবে, পৃথিবীতে মৌলিক থ্রিলারের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটা, এবং বাকি সবগুলোই তাদের নকল।
বইটা সম্পর্কে যা কিছু বলার ছিলো বলেই দিলাম। আপনাকে আমন্ত্রণ থাকলো বইটা পড়ার জন্য। না পড়লে আফসোস আপনারই থাকবে। এতো ভালো একটা থ্রিলার থেকে বঞ্চিত হ
Read More: Top 5 Freelancing Skills to Learn for Beginners
For Bengali Book Review Please Visit: Boier Feriwala